[মুখবন্ধঃ “বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনেট, ওয়েবসাইট ও টুকরো কিছু স্মৃতিকথা” একটা ধারাবাহিক ঘটনার পরম্পরা। যা এখানে লিপিবদ্ধ তা বাস্তবতা। আমি আমার দৃষ্টি দিয়ে দেখে লিখেছি, দৃষ্টি Change হলে দৃষ্টি-ভঙ্গীর ও পার্থক্য হতে পারে যেটা আপেক্ষিক। এই পরম্পরায় ৩ টি পর্ব আছে। পর্বগুলো পড়ে মতামত জানাতে পারে যে কেউ-ই। তবে সঙ্গতি রেখে মতামতের জন্য অনুরোধ করব। ধন্যবাদ।]

১.
২০১১ এর ২০শে জানুয়ারী আমি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে জয়েন করি। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে জয়েন করার পরপর ই বুঝতে পারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিব জরুরী দুটি জিনিস নেই; ইন্টারনেট কানেকটিভিটি আর একটি যুগোপযোগী ওয়েবসাইট। এই টুয়েন্টি ফাস্ট সেঞ্চুরীর একটা রাস্টায়ত্ব বিশ্ববিদ্যালয় শুরু হওয়া উচিত ঠিক টুয়েন্টি ফাস্ট স্টাইলে যেমনটা দেশের বাইরের নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গুলো কম্পিটিটিভ এই ওয়াল্ডে তাদের যাত্রা শুরু করে থাকে, শুরুতেই তারা একটা অটোমেটেড ডিজিটালাইজড সিস্টেম নিয়েই শুরু করে যেটা এখন একটা রীতি। কেননা, পুরাতন বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের আয়তনের কারনে অটোমেটেড সিস্টেম ডেভেলপে রীতিমত হীমসিম খায় সেখানে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে বিষয়টা সহজ। একটা কম্পিলিটেড অটমেটেড সিস্টেম একটা গুড এডভারটাইজমেন্ট ও বটে। কিন্তু কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে আমি রীতিমত অবাক হয়ে গেলাম। বিশ্ববিদ্যালয়টি তার যাত্রা শুরু করেছে Ancient Age থেকে। ডিজিটালাইজেশনের যে সুতিকাগার “ইন্টারনেট” সেই ইন্টারনেট-ই বিশ্ববিদ্যালয়ে অবর্তমান, নেই যুগোপযোগী ওয়েবসাইট।

২.
জয়েন করার কিছু দিনের মধ্যেই আমি তৎকালীন ভিসি মহোদয়কে বললাম, বিশ্ববিদ্যালয়ে আই সি টি আর কম্পিউটার সায়েন্সের মত দুটো বিভাগ আছে যেখানে তথ্যপ্রযুক্তি শেখানো হয় অথচ এখানেই ইন্টারনেট কানেকশন নেই ব্যাপারটা হতাশাজনক। তিনি বললেন, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় আস্তে আস্তে হবে। এই আস্তে আস্তে শব্দ দুটি আমার কোন দিনও পছন্দের ছিলো না, তখনও পছন্দ হয় নি…! সে যাইহোক, আমার মনে আছে আমি তাকে খুব-ই সু স্পষ্ট ভাবে বলেছিলাম, আমি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিসনেজ এন্ড টেকনলোজি (BUBT) তে (আমার রেখে আসা ওয়ার্ক স্টেশন) সেখানকার কম্লিট ওয়েব সলিউশোন টিমের কনভেনার ছিলাম। আপনি চাইলে আমি এখানকার ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্টে কাজ করতে পারি। ভিসি স্যার বললেন, বেশ। এখানে একটা ওয়েবসাইট সংক্রান্ত কমিটি আছে, তুমি তাদের সাথে যোগাযোগ কর।………… সময় যেতে থাকলো।

৩.
আমার সাথে একই সিন্ডিকেটে জয়েন করছিলেন পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ড. আবু তাহের স্যার। একদিন তিনি ফ্যাকাল্টি থেকে নামতে নামতে আমার কাছে আমার এক সহকর্মীর অবস্থান জানতে চাইলেন, বললেন সে কোথায়। আমি বললাম, কিছু বলতে হবে তাকে? স্যার বললেন ওয়েবসাইটের নতুন কমিটি ফর্ম করেছে সেই কমিটির মিটিং এর টাইমটা তাকে জানাতে হবে। আমি একটু অবাক হয়েছিলাম, কেননা আমি ভিসি স্যারকে বলেছিলাম আমি কমিটিতে কাজ করতে ইচ্ছুক অথচ কমিটিতে আমি নেই। “ব্যাপার না” ভেবে সাথে সাথেই আমি ভিসি স্যারের সাথে দেখা করি ও অনেকটা Insist করে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট কমিটিতে সদস্য হিসাবে নিজেকে অন্তভুক্ত করি।

৪.
প্রথম মিটিং-এর কথা আমার খুবই মনে আছে। কমিটির কনভেনর ছিলেন ড. তাহের স্যার। ওয়েবসাইট ডেভেলপ সংক্রান্ত প্লান নিয়ে আমাদের মেম্বারদের ভিতর বেশ মতভেদ দেখা গেলো। আমি খুব-ই সুস্পস্ট ভাবে জানালাম, বাস্তবতা থেকে আমি দেখেছি শিক্ষকেরা ক্লাস নিয়ে প্রচন্ড ব্যস্ত থাকে তাই বাইরের কোন কম্পানিকে দিয়ে করানোটাই যুক্তিযুক্ত হবে। আমি সবাইকে উদাহরন দিচ্ছিলাম। বলছিলাম, দেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলো দেখেন, উদাহরন হিসাবে আমি UIU,ULAB, NSU আর BUBT এর কথাও তুলে ধরেছিলাম। বলেছিলাম এরা সবাই প্রফেশনালদের দিয়ে তাদের ওয়েব ডেভেলপ করেছে। আমাদের শিক্ষক কম এবং সময়ও কম, আমরা গাইড করতে পারব শুধু কিন্তু হাতে ধরে কাজ করে দেবার মত সময় আমাদের হবে না। তাই We should suggest to the authority to sanction a budget. আমার এই প্রস্তাবনাটা সংগতকারনেই একসেপ্টেড হয় নি। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আই সি টি আর সি এস ই এর মত ডিপার্টমেন্ট আছে সেখানে ওয়েবসাইট কম্পিটলি বাইরে থেকে করানো সবার জন্য “লজ্জাজনক” প্রস্তাবনা ছিলো। আর তাই সেই মিটিং-এ এই প্রস্তাবনাটি সম্পুর্নভাবে গৃহিত হয় নি, যেটা মিটিং-এ সিদ্ধান্ত হয়েছিলো সেটা ছিলো এমন যে। ওয়েবসাইট ডেভেলপে বাজেট দরকার। বাজেট হলে ওয়েবসাইট ডেভেলপ হবে।
কিন্তু আমি কেনো এমন প্রস্তাবনা করেছিলাম? আমি এমন প্রস্তাবনা করেছিলাম আমার অভিজ্ঞতার আলোকে। কেননা আমি জানি, এভাবে যদি আমরা কোন বাজেট চাই তাহলে অথরিটি কখনোই আমাদের বাজেট দিবে না, আর তারা আমাদের দিয়ে শুধুই ভলেনটারী করে কাজ করে নিতে উদ্যত হবে। কারন তাদের সাধারন সেন্টিমেন্ট-ই এমন যে আই সি টি/সি এস ই -এর কাজ এগুলো, তাদের একটু চাপ দিলেই হয়ে যাবে। কিন্তু বিষয়টা কখনোই এমন না। একটা সাইট করতে যেখানে যে Laborious ওয়ার্ক থাকে তা কখনোই একজন শিক্ষক করতে পারবে না, কেননা এমন সময় আর অবস্থান কোনটিই শিক্ষকের এই স্টেজে নেই। যদি থাকতো তাহলে তারা ফ্রিল্যান্সিং করতো বা এ ধরনের কাজের ফার্মে সময় দিতো (Plain logic)। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক লোডের পাশে তারা এতটা সময় পায় না বিধায় এই ধরনের এক্টিভিটিজে তারা অবর্তমান। আর সংগতকারনেই তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের পিছনে ডেডিকেটেড সময় ব্যয় করতে পারবে না। এমতোবস্থায়, আমার প্রস্তাবনা টা ছিলো এই কারনে, যে যখন বাইরের কম্পানির ওয়েবসাইট সংক্রান্ত বাজেটের প্রস্তাবনাটি Authority দেখবে তখন তারা বুঝবে বিষয়টার প্রয়োজনীয় আর্থিক দিকটা। তারপর যদি তারা বাইরের কম্পানি থেকে করে তো ভালো, আর না করতে আগ্রহী হয় তাহলেও কিছু বাজেট তারা ওয়েবসাইট এর উন্নতি কল্পে দেবে যেটা দিয়ে আমরা সাইটের Laborious/Tedious যে Work টুকু আছে তা বাইরের কম্পানিকে দিয়ে করিয়ে নেব কিংবা আমাদের স্টুডেন্ট যারা Learned তাদের ন্যুনতম পারিশ্রমিকের বিনিময়ে করিয়ে নেব। যেহেতু সেই মিটিং থেকে এমন কোন ডিশিসন নেওয়া হয় নি, ওয়েবসাইট বিষয়ক ঘটনাগুলি As it is চলতে থাকলো।

৫.
সময়ের পরিক্রমায় কিছু স্বাভাবিক পরিবর্তন আসতে থাকলো। আমার কিছু শ্রদ্ধেয় সহকর্মী কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে অন্যন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কিংবা দেশের বাইরে হাইয়ার এডুকেশনে চলে গেলো আর একারনেই ওয়েবসাইটের প্রাথমিক কন্ট্রোল হাত থেকে হাতে ঘুরতে থাকলো। ঘুরতে ঘুরতে একটা সময় আমার হাতে আসলো। আমি সাথে সাথে আমার পুর্ব-অভিজ্ঞতালব্ধ Observation -এর আলোকে কাজ শুরু করলাম। কারনে-অকারনে বিভিন্ন সময়ে তৎকালীন ভিসি স্যারের সাথে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করলাম। সোজা বাংলায় জ্বালাতে শুরু করলাম। স্যার তার বাসার যে কোন বৈঠকে কিছুটা হলেও গল্প করতেন। এই সব গল্পের ভিতরে আমি আমার কর্মপরিকল্পনা ঢুকিয়ে দিতাম। একটা সময় স্যার বললেন ঠিক আছে তুমি বিভিন্ন ডেভেলপারদের কাছ থেকে Quotation নাও। প্রচন্ড উৎসাহে আমি কাজ শুরু করলাম। শীর্ষস্থানীয়, ও Mediocre কিছু কোম্পানী থেকে Quotation সংগ্রহ করলাম। এবার এই কোটেশন নিয়ে স্যারে পিছে পিছে ঘুরছি। তিনি এদিন সেদিন করে কাটিয়ে যাচ্ছেন। এমনই একটা দিন, মনে আছে ফাইল গুলো নিয়ে যথারীতি স্যারের বাসা থেকে তার অনাগ্রহের কারনে ভগ্ন হৃদয়ে বেড়িয়ে আসছি। আমার সাথে বেরিয়ে আসছিলেন তখনকার সময়ের এক বড় নেতৃত্বস্থানীয় শিক্ষক।
সে আমার অবস্থা দেখে আমাকে স্বান্তনা দিতে বলছিলেন, “ফিদা, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কিছু করে লাভ নেই। এর থেকে নিজের কাজ করো।”
আমি খুবই অবাক হয়েছিলাম। সে আমাকে স্বান্তনা দিতে বলতে গিয়ে নিজের ভিতরের কথাটা কি বলে ফেললো…! সে তো নিজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় বড় অবস্থানে, নীতিনির্ধারনের সাথে জড়িত, তাহলে সেগুলো কি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নয়? পরে দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে বুঝেছিলাম, সে গুলো আসলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ছিলো না, কাজ গুলো ছিলো বড় বড় পদ গুলোতে আসিন হয়ে থাকা আর যেকোন মুল্যে ভিসি-র অবস্থান টিকিয়ে রাখা…! হায়।।

যাইহোক এমনই একদিন হঠাৎ স্যারের ফোন পেলাম। স্যার সাধানত সরাসরি ফোন করতেন না। তাই অবাক হয়ে গেলাম। স্যার বললেন তার বাসায় যেতে। দ্রুত স্যারের বাসায় গেলাম। স্যার আমাকে মিষ্টি খেতে দিলেন (!), পরে হাসি মুখে বললেন,
ফিদা নতুন বছরটা নতুন করে শুরু করতে চাচ্ছি, তাই, ওয়েবসাইটটা নিয়ে ভাবছি। তোমার প্রস্তাব গুলো নিয়ে আসো…! আমি Surprised হয়ে স্যারের কাছে আমার ডকুমেন্টস গুলো জমা দিয়ে আসলাম। পরে জেনেছিলাম, সেদিন স্যার আমাকে ডেকেছিলেন কারন তার আগের দিন একটা মিটিং-এ স্যার বিজনেস ফ্যাকাল্টির সকল শিক্ষকের তোপের মুখে পড়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের হাল নিয়ে। প্রসঙ্গতঃ বিজনেজ ফ্যাকাল্টি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা Mightyous ফ্যাকাল্টি। —তারপরো সব কিছু সেই পর্যন্তই থেমে রইলো।

৬.
স্যারের ভিসি মেয়াদের শেষ সময়টিতে বিশ্ববিদ্যালয় খুব-ই উত্তপ্ত হয়ে উঠলো। আমি শিক্ষক সমিতির Executive Member ছিলাম তাই ভিতর বাইরের সব কিছুই চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, নীতিনির্ধারনের বেশ কিছু জায়গায় পরিবর্তন না আসা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় অচল থাকবে। প্রশাসনকে কোন সাহায্য করবো না। হঠাৎ করেই কোন এক অজ্ঞাতকারনে(!) বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইটটি পড়ে গেলো, একেবারেই নাই হয়ে গেলো। স্যার আমাকে খোজ পাঠালো। যেহেতু আমরা Movement-এ আছি, সংগতকারনেই দেখা করলাম না। স্যার তার এক নিজেস্ব কর্মকর্তাকে (নাম না বলি 🙂 ) কে আমার বাসায় পাঠালো। এবার যা ঘটলো,
সন্ধার পর সে আসলো।
সে আমাকে বললো, স্যার আপনাকে দেখা করতে বলেছে।
আমি বললামঃ সময় পেলে দেখা করব, কেনো বলুন তো?
সে বললোঃ আমাদের ওয়েবসাইটে তো ঢুকা যাচ্ছে না, ওটা নিয়েই।
আমি বললামঃ “ও “
সে একটু এক্সাইটেড হয়েই আমাকে বললোঃ এটা ঠিক করতে হলে কি করতে হবে আমাকে বলেন তো? কি করতে হবে, Google কে ফোন দিতে হবে? বলেই সে তার পকেট থেকে নোকিয়া ১১০০ টাইপ একটা সেট বের করে ফেললো।
ও মাবুদ…! তার অবস্থা দেখে আর প্রস্তাব শুনে হাসতে হাসতে আমার পেট ব্যাথা হয়ে গিয়েছিলো। আক্ষরিক অর্থে তার সামনেই আমি হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা করে ফেলেছিলাম। ওয়েবসাইট আপ করতে গুগুলকে ফোন করতে চায় সে। [হা হা হা, তবে সেই যে পেটে ব্যাথা হলো আমার, এই ব্যাথাই বুঝি আজ আমার পেটের পীড়া হয়ে দাড়িয়ে আছে 🙁 ]
হো হো 🙂
বিশ্ববিদ্যালয়ের জয়েন করার একেবারেই শুরুতে, এক মাস হবে, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের Domain এ একটা মেইল এড্রেস দরকার পড়েছিলো। আমি খুজছিলাম এটা কার আন্ডারে আছে, তাকে দিয়ে খুলিয়ে নেবো। এই লোকটা স্যারের নিজেস্ব কর্মকর্তা বলে তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, বলেছিলাম আমাদের ওয়েবসাইটটা কার আন্ডারে, সে বলেছিলো কেনো! আমি বলেছিলাম এই যে আপনারা যে মেইল এড্রেস ইউজ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের [email protected] এটা তো অথেনটিকেট না। নিজেদের ডোমেইনে কেনো নিজেরা ইউজ করছেন না, [email protected] এটা শুধু অথেনটিকই না একটা এডভারটাইজমেন্ট ও বটে।এই লোকটাই তখন আমাকে বলেছিলো, কি যে বলেন না, এগুলো করতে সার্ভার থাকতে হয়, ইন্টার্নেট থাকতে হয় bla bla এগুলো সম্ভব না। আমি তাকে বুঝাতেই পারছিলাম না, আপনার ধারনা ভুল, কারন আপনি যাদের কাছে হোস্টিং করেছেন সেই কম্পানিই এই ফ্যাসিলিটিজ আপনাকে দেবে। সে বুঝে নি। কেন বোঝেনি তার কারন হিসাবে আমি দেখেছিলাম, তার সাথে আমার কিছু শ্রদ্ধেয় সহকর্মীর ঘনিষ্টতা ছিলো, যাদের কাছ থেকে সে কিছু এক্কা দোক্কা শিখে নিজেকে জানলে ওয়ালা ভাবতো। [বস্তুতঃ ভিসি স্যারের আশেপাশে এ ধরনের টেক এক্সপার্ট থাকার কারনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের টেকনলজি সাইডের এই হাল ছিলো।]
এবার মজার বিষয়টা বলি, এই অল্প কয়েকদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা হাই কনফিগারেশনের কম্পিউটার তার ব্যাবহার কার্যে যায় এবং সেটা কলাপ্স করে। সে সেইটা ঠিক করতে হতো বেশ কয়েকজায়গায় ধর্ণা দেয় এবং পরিশেষে আমাকে ফোন দিয়ে বলে, ফিদা স্যার, এটা কেউ ই ঠিক করতে পারছে না। সবাই বলছে নষ্ট হয়ে গেছে। আমি জানি, এটা আপনি ছাড়া কেউ-ই ঠিক করতে পারবে না। তাই আপনি যদি একটু দেখতেন।
সত্যি বলতে কি, এটা আপনি ছাড়া কেউ-ই ঠিক করতে পারবে না। তাই আপনি যদি একটু দেখতেন। এই কথাটুকু সে এভাবেই ওভার ফোনে আমাকে সে বলেছিলো। যাই হোক, তার ডেড Computer টাকে আমি Live করে দিয়েছিলাম।
নিয়তি…!

৭.
ভিসি স্যারের ঠিক শেষের দিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দুঃরবস্থা বিশেষ করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুঃরবস্থা নিয়ে আমার একটা লেখা জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাকের উপ-সম্পাদকীয়তে ছাপা হয়। সেটা নিয়ে বেশ বিতর্ক হয়। প্রশাসনের অনেকেই প্রশংসা করে তবে ভিসি স্যার প্রাথমিকভাবে আমাকে একটু ভৎসনা করে। বলে আমার এই শেষ সময় তোমরা এগুলো কি করছো, এটা তিনি অফিসে সবার সামনেই বলে। তবে একদিন বাসায় তিনি ম্যাডামের সামনে আমার ওই লেখাটার ভুয়সী প্রশংসা করেন…!

এই পুরো ব্যাপারগুলো ঘটেছে আড়াই বছর ধরে। আমরা অনেকেই সহঃযোদ্ধা ছিলাম। সবার চাওয়া এক ছিলো, উন্নতি। হয়তো সবার প্রস্তাবিত প্রক্ক্রিয়ায় পার্থক্য ছিলো। আমি জানি না, ঠিক কি কারনে স্যার আমার প্রস্তাবে কনভিন্স হয়েছিলেন। তবে তিনি তার শেষ ফিন্যান্স কমিটির মিটিং-এ যে কাজটি করলেন তা ছিল আমার জন্য বিস্ময়কর। চলে যাবার প্রাক্কালে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের জন্য তার শেষ মিটিং এ ২ লক্ষটাকা আর ইন্টার্নেটের জন্য ৫ লক্ষটাকা (ভিসি নিজক্ষমতা বলে সর্বোচ্চ ৫ লক্ষটাকা অনুমোদন দিতে পারে) অনুমোদন দিয়ে গেলেন…!

এই পর্বের পরিশিষ্টঃ ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট বিষয়ক ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটা পুর্নাঙ্গ কমিটি হয়েছে। আমার শুভ-কামনা রইলো কমিটির প্রতি। আশাকরি, বিশ্ববিদ্যালয়ের আকাঙ্খার কথা মাথায় রেখে তারা কাজ করবে।

 

এই পরম্পরার দ্বিতীয় পর্ব পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করতে পারেনঃ
দ্বিতীয় পর্বঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনেট, ওয়েবসাইট ও টুকরো কিছু স্মৃতিকথা- পর্ব-২

এই পরম্পরার তৃতীয় পর্ব পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করতে পারেনঃ
তৃতীয় পর্বঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনেট, ওয়েবসাইট ও টুকরো কিছু স্মৃতিকথা- পর্ব-৩

৩রা জানুয়ারী, ২০১৩, আমি কোটেশন সংগ্রহ করে ডকুমেন্টেশন কমপ্লিট করেছিলাম, এই কোটেশনের আলোকে কাজ না হলেও একটা কম্পিলিট ওয়েবসলুসনের জন্য যে এটলিস্ট ২ লক্ষটাকা প্রয়োজন সেটা তৎকালীন ভিসি স্যার এখান থেকেই অনুধাবন করেছিলেন।

IMG_20140614_144736 IMG_20140614_144801 IMG_20140614_144850 IMG_20140614_144907 IMG_20140614_144918 IMG_20140614_144935 IMG_20140614_144949

 

FB তে মন্তব্য করতে এখানে লিখুন (ব্লগে করতে নিচে) :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

March 2024
S M T W T F S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31