১.
আইসিটি ফেলোশিপ নিয়ে একটা হাস্যকর অথচ বিদঘুটে একটা সমস্যা হয়েছিলো। আমি ফেলো মনোনীত হবার পরও সন্মানটা প্রায় হারাতে বসেছিলাম। একটা বিষয় নিয়ে মিনিস্ট্রিতে সংশ্লিস্ট কাউকেই বোঝাতে পারছিলাম না তারা যেভাবে চাইছে তা হবার নয়, হয় না। কিন্তু তারা তাদের ধারনাতে অসাড় আর অবস্থানে ছিলো অনড়…! উপায়ন্তর না দেখে অস্থির আমি যুগ্ন-সচিব যিনি বিষয়টার দায়িত্বে ছিলেন তাকে এড়িয়ে সচিব মহোদয়ের সাথে দেখা করলাম। জনাব এন আই খান, আমি আমার একটা ভিজিটিং কার্ড তার পিএসকে দিয়ে বললাম দেখা করব।

২.
স্বচ্ছ কাচে ঘেরা তার চেম্বারের বাইরে থেকে দেখতে পেলাম পিএস কার্ড টি দেখালো আর তড়িঘড়ি করে বাইরে বেরিয়ে আসলো- আমাকে ভিতরে যেতে বললো। ভিতরে যেতেই তিনি উঠে দাঁড়িয়ে আমার সাথে হ্যান্ডশেক করলেন। বিষয়টি বলতেই তিনি হেসে দিয়ে বললেন, এরা কিছু বোঝে না। আমাকে আরো অবাক করে দিয়ে বললো, আপনারা ব্যুরোক্রেট বলে মাঝে মাঝে টিটকারি করেন না, এরা হচ্ছে সেই ব্যুরোক্রেট…! আমি খুব এক্সাইটেড ছিলাম, ওনার কথা না ধরে বললাম, এখন কি করা যায়। বললো, আপনি যেভাবে চাচ্ছেন সেভাবেই হবে। আপনি কোন চিন্তা করবেন না। ২০ দিন সময় নিলাম, না হলে আপনি আমাকে ফোন করে জানাবেন। শুনে বেরিয়ে আসলাম। (এত অস্থির আর উত্তেজিত ছিলাম যে সেই সেশনের আর তেমন কিছু মনে নেই, তবে মনে আছে অনেক কথাই হয়েছিলো ।) ওনার কথায় কাজ হলো, পলিসিতে কিছু প্রবলেম ছিলো তা সংশোধিত হলো। কিন্তু ২০ দিন নয় কাজটি হতে কয়েকটা মাস লেগে গেলো। ভাবলাম- হলেই হলো, তাই তার সাথে আর যোগাযোগ করলাম না।
কিন্তু শেষ স্টেজে আবার একটা প্রবলেম হলো, হাসি মুখে তার কাছে গেলাম। কিছুটা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেও বটে।

৩.
এবার সব কিছু মার্ক করলাম আমি। তিনি তার চেয়ার থেকে হালকা উঠে দাঁড়িয়ে আমার সাথে হ্যান্ডশেক করলেন। এভাবে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ছেলে বয়সি (!) একটা ছেলেকে সন্মান দেওয়া, বিষয়টা বেশ আন-ইউজিয়াল ছিলো নিসন্দেহে আর ওই মিনিস্ট্রিতে তো বটেই…! তার আগ্রহ আর পরিস্থিতির ব্যাখ্যাও আমাকে অবাকই করে দিচ্ছিলো। যা বলছিলাম তা তাকে বুঝিয়ে দিতে হচ্ছিলো না, তিনি নিজেই বুঝে নিচ্ছিলেন। আমি সেদিন খুব ইনজয় করছিলাম কেননা তখন সেখানে উপ/যুগ্ন সচিব সহ আরো কিছু লোক ছিলেন যাদের মনোভাব কখনোই ফ্রেন্ডলি ছিলো না। তারা তাকিয়ে তাকিয়ে বিষয়টি দেখছিলেন, জানি না সেখান থেকে তারা কিছু শিখেছিলেন কিনা…!!

৪.
যাইহোক, আমি খুব ভেবেছি এই বিষয়টি নিয়ে। আমাকে আমার বন্ধুরা বলেছে, লোকটার রাজনৈতিক উচ্চাভিলাস আছে, তোকে ইম্প্রেস করতে চেয়েছে। আমি ভেবেছি হয়তো, তবে আমি এতটুকু বুঝেছিলাম, সে আমাকে স্পেসিফিকলি নয়, সে একজন শিক্ষককে সন্মান দেখিয়েছিলো।
শিক্ষকতায় সন্মান ছাড়া আর কি আছে বাংলাদেশে? So called ক্ষমতা? ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স? কোনটিই নেই। যে সন্মানটুকু ছিলো তাও সীমাবদ্ধ এখন মুখে মুখে, আর একজন শিক্ষকের তার নিজের ছাত্রছাত্রীদের কাছে। আজকাল তাও ক্ষনস্থায়ী। সমাজে শিক্ষকতা এখন রুগ্ন পেশা। তাই দ্বিকভ্রান্ত অনেক শিক্ষকেরাই সন্মানের কথা ভুলে বিভিন্ন অপরাধ কর্মে লিপ্ত হয়ে উঠেছে। এই রুগ্ন অবস্থায় সচিব মহোদয় কেনো শিক্ষককে এভাবে সন্মান দেখালো আমার বোধগম্য হচ্ছিলো না। তবে এটা ঠিকই বুঝেছিলাম, সে সবার থেকেই আলাদা। খোজ নিয়েছিলাম তার সম্পর্কে, তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পি এস ছিলেন, তার সাথে স্বভাবতই তার ঘনিষ্টতা ভালো তাই তার ডিসিপ্লিনের সবাই তাকে ভয় পায়, শ্রদ্ধা করে আবার অনেকে অপছন্দও করে। কিন্তু কেউ তাকে বাধা দেয় না, কেননা তিনি সৃজনশীল আর ভিন্ন ধাতের এক সফল মানুষ।

৫.
আজ পুরো বিষয়টি নিয়ে একটা প্রশ্নের উত্তর পেলাম এই নিচের পোস্টে, কোন একসময় জনাব এন আই খান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চেয়েছিলেন…! ভালো লাগলো এরকম ভিন্ন ধাতের সফল একজন মানুষ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশায় আসতে চেয়েছিলেন, যে কোন কারনেই হোক তা হয়তো সে পারে নি। সেখান থেকেই হয়তো শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার জন্ম হয়েছে…!!
জানি রাস্ট্র ব্যবস্থা আজ এই শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার স্থানকে নস্ট করে দিয়েছে। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শুধুই রাজনৈতিক বিবেচনা ছাড়াও কোন কোন স্থানে টাকার লেনদেনেও হয়। তারপরও, সচিব মহোদয়ের মত ভিন্ন ধারার লোকজনের এখনো পছন্দ এই প্রফেশন আর তাদেরও ক্ষমতা আছে তাদের চারপাশটাকে পরিবর্তিত করে দেবার। শুধু দরকার একটু পরিবেশ, আর প্রনেদনা।
আমার শুভ কামনা রইলো তার নতুন দায়িত্বে, শিক্ষা খাতে নিসন্দেহে খুবই প্রয়োজনীয় কিছু পরিবর্তন আসবে তা আজ আমি লিখে দিলাম। 🙂
A link in Facebook on N I KHAN

FB তে মন্তব্য করতে এখানে লিখুন (ব্লগে করতে নিচে) :

5 Responses to জনাব নজরুল ইসলাম খানকে নিয়ে একটা অভিজ্ঞতা…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

April 2024
S M T W T F S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930