২০- এবারলে রোড, হার্সটন
কুইন্সল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া

১.
অস্ট্রেলিয়ায় এসেই আমি যে বাসাটায় উঠেছি এটা একটা ডুপ্লেক্স কাঠের বাসা। সাধারনত এখানের সব রেসিডেন্টসিয়াল বাসা গুলো ডুপ্লেক্স আর তৈরি কাঠ দিয়ে। বাসাটার মালিক মার্গারেট নামের এক বৃদ্ধা মহিলা। এখানের রীতি অনুসারে ওকে মার্গারেট নামেই ডাকি, ওরা স্বস্তিবোধ করে…!
এখানে পৌছাবার আগেই মার্গারেটের সাথে আমার চিঠি চালাচালি হয় তাই এসেই সরাসরি একটা গোছানো রুমে উঠে পড়ি। প্রথম এপেরেন্সে বাসাটা দেখে একটু অবাকই হই, ভয় কি করেছিলো? মনে পড়ছে না তবে অবাক হয়েছিলাম। বাসাটায় সাদারং করা তবে অনেক পুরোনো। শুনেছি ১০০ বছর তো হবেই।
প্রথম রাতটা কাটাবার পর সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেব, এখন দেখি আমার রুমের দরজায় কোন লক নেই। বিপদেই পড়ে গেলাম। ছোট্র একটা ছিটকানি টাইপ আছে তাতে কোন তালা বা লাগাবার কিছু নেই। এদিকে বাংলাদেশ থেকে তো তিনটা বড় বড় সুটকেস ভরে সুই-সুতা থেকে শুরু করে ৪ বছরের জন্য যা যা দরকার কিনে নিয়ে এসেছি…! কি করব বুঝতে পারছিলাম না। ভাবছি এভাবে রেখে যাব? চোর বাবাজির তো গোছানোও লাগবে না, সব গোছানো আছে, জাস্ট নিয়ে যেতে হবে…!
অভিক-কে জিজ্ঞাসা করলাম কি করা যায়, ও বললো রেখে দেন, চাইলে দরজাটা খুলেও রাখতে পারেন কেউ কিচ্ছু নিবে না। এই বলে সে বাসার সদর দরজাটা ও খুলে চলে গেলো…! আমি কি করা উচিত না বুঝেই ওভাবে রেখে ওর সাথে চলে গেলাম। মনটা খচ খচ করছিলো, ল্যাপটপটা রেখে এসেছি, রেখে এসেছি হার্ডডিস্ক গুলো। আমার তো সবই ওগুলোতে…! অসস্তি নিয়ে ধুক ধুক বুকে সব কিছু ওভাবেই রেখে চলে যাই।
…বিকালে ফিরে আসি। নাহ, ফিরে এসে সস্তির নিঃস্বাস ছাড়ি, সব কিছু তাদের জায়গা মতই আছে।
সন্ধার একটু আগে মার্গারেট আসলো, কথা হলো। বললাম কাল রাতে আমার শীত লেগেছে, শুনে সে একটা ব্লানকেট এনে দিলো। এরপর বললাম, বাসায় তো তালা-চাবি নেই, কেমনে কি…! ও আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো, বললাম সিকিউরিটি তো একটা বিষয়। তখন সে আরো অবাক হয়ে বুঝলো যে বাংলাদেশ থেকে আসা এই নতুন ছেলেটি আস্থাহীনতায় ভুগছে, তার সিকিউরিটি দরকার। এরপর সে যেটা করলো তাতে আমি কিংকর্তব্যবিমুড় হয়ে গিয়েছিলাম যা মনে রাখার মতো একটা বিষয়ও বটে। আমার কথার পর মার্গারেট কোথা থেকে যেন একটা মিনিয়েচার সাইজের তালা নিয়ে আসলো আমার জন্য, ছোট তালা যা সাধারনত লাগেজে লাগায়, এনে বললো এই যে তোমার সিকিউরিটি…!
২.
ছোট সময় অনেক গল্প শুনতাম, বিশেষ করে পরিবারের বড়দের কাছ থেকে। কিছু গল্প ইসলামিক বই গুলোতেও পড়েছি। গল্পগুলো অনেকটা ‘মিথ’ হিসাবেই আমাদের বলা হতো। মিথ বলছি এজন্য যে ওগুলো আমাদের শোনানো হতো কেননা ওগুলো আগে ছিলো, এখন নেই, আর এখন সম্ভব ও না…! এর ভিতর একটা গল্প ছিলো কোন এক খলিফার আমলের গল্প, সেখানে কোন একটা জায়গায় খুব বেশি চুরি হতো, সেই চুরি বন্ধ করতে একজন শক্ত গভর্নর নিয়োগ দেয় খলিফা, সেই গভর্নর একটা নতুন আইন আনে যেখানে রাত ১২ টার পর নগরীতে বের হওয়া মানা। যেই বের হবে তার হাত কেটে দেওয়া হবে বা তাকে হত্যা করা হবে। এই আইনের জন্য প্রথম কয়েকদিন বেশ কয়েকজন মারা পড়লো এরপর ধীরে ধীরে চুরি কমে আসলো। তারপরো খুবই Rigidly আইনটা বলবত থাকলো। এতটাই কঠিন ছিলো আইনের প্রয়োগ যে একদিন কোন এক বৃদ্ধা তার মেয়ের অসুস্থতার কারনে বাধ্য হয়েই রাতে বাসা থেকে বের হয়। কিন্তু তাকেও বের হবার জন্য হত্যা করা হয়…! তবে যাইহোক, এত কঠরতার পরই কিন্তু সে চুরি বন্ধ করতে পারে, আর বিষয়টা এমন পর্যায়ে দাঁড়ায় যে এরপর থেকে নগরীর সবাই রাতে বাসার দরজা খুলে ঘুমাতো কিন্তু কিছুই চুরি হতো না।
ছোট সময় এই গল্প গুলো শুনতাম আর আনন্দ পেতাম, অবাকও হতাম। তবে একই সাথে সুক্ষভাবে হয়ত একটা ধারনা আমাদের মধ্যে বদ্ধমুল হতো, হয়েছে, -এত কঠিন হওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না তাই দরজা খুলে ঘুমানোর মত পরিবেশ আমাদের আসবে না। যখন হয়েছিলো তখন ছিলো খলিফাদের আমল, কিছু মহামানুষরা যাদের আমরা ফলো করি তারা পেরেছিলো। আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। (আক্ষরিক অর্থে আমরা তা পারছিও না।)

I wonder, people here in those first world countries are enjoying such phenomena as a reality around them….! I think, they don’t have such “khalifa” or something like phenomenon people rather they do have law and it’s proper implementation. In this sense, all of the peoples here are sensible like ‘khalipha’ and as a result they are dominating/regarding this world like real ‘khalipha’/’king’. (SIGH)

৩.
এই বাসার সামনে একটা বিড়াল থাকে। সামনে বলছি এই কারনে যে বিড়ালটা ভুলেও বাসায় ঢুকে না। সে বাসার চারপাশ দিয়েই ঘুরঘুর করে। কেউ বাসায় আসলে সে তার সাথে বাইরের সিড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে ঠিক দরজার সামনে বসে থাকে। তবুও সে দরজার ভিতর দিয়ে বাসায় ঢুকে না। সবাই প্রথমে ওর সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলো, ও একটা Wild cat. আমি বিশ্বাস করিনি, এটা বিশ্বাস করার মত না। পরবর্তিতে আমি সবার সাথে কথা বলে যেটা বুঝলাম, এটা সম্ভবত কোন এক সময় কারো Pet ছিলো তবে সে তাকে হারিয়ে Wild হয়ে গিয়েছে। মানে এখন তার কোন Owner নেই। আমার কাছে বিড়ালটা দেখতে সুন্দর, বেশ লোমশ। কিন্তু অন্যরা পছন্দ করে না। মার্গারেট তো বারনই করে দিয়েছে এই বিড়ালটাকে কিচ্ছু খেতে দেওয়া যাবে না। আমি যখন-ই অফিস থেকে ফিরি ও আমার পায়ে পায়ে সিড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে আসে কিন্তু দরজা ক্রস করে ভিতরে ঢুকে না। আমি ঢুকে যাই কিন্তু ও দাঁড়িয়ে থাকে। এটা নিসঃন্দেহে একটা ট্রেনিং এর ফলাফল। কোন এক সময়, হয়তবা অনেক আগে তাকে তার মনিব শিখিয়েছিলো, সে ভুলে নি…!! এত দিন পর সে তার মনিবকে হারিয়ে দ্বিকভ্রান্ত, খেতে পায় না (খেতে না পেয়ে একদিন নাকি মারাও যাচ্ছিলো প্রায়), তারপরো সে তার শিখিয়ে দেওয়া জীবন থেকে বেরিয়ে আসছে না। কিন্তু দরজাটা পেরোলেই ডাইনিং টেবিলে খাবার থাকে সবসময় যেটা দেখে মার্গারেটে একদিন বলেছে এভাবে খাবার রাখতে নেই, সারাটা দিন বাসায় কেউ-ই তাকে না, চাইলেই সে ইচ্ছামত খেতে পারে। কিন্তু সে ভুলেও কাজটা করে না। কি অদ্ভুদ। আমার নিজের পোষা বিড়ালও তো আমার নিজের খাবারে মুখ দিতে দেখেছি, ফেলে রাখা খাবার তো অনেক দুরের বিষয়…!

প্রিয় ডায়েরী,
হবে না, আমি বুঝতে পারছি এভাবে চলতে থাকলে আমার PhD নেওয়াটা বেশ কঠিন হয়ে যাবে। কেননা PhD বিষয়ক পড়া থেকে আমার চারপাশের এই দুনিয়াটাকেই পড়তে ভালো লাগছে। জানতে ইচ্ছা করছে কেন এমন? এগুলো কি জ্বীনগত, না Long rendered practice…! এটা নিশ্চিত, এরকম একটা ডিসিপ্লিন্ড লাইফ এদের বিশ্বের মধ্যে শুধু ধনীই নয়, সবচেয়ে সুখী দেশ হিসাবে পরিনত করেছে। বুঝতে পারছি, সুখের জন্য শুধুই ধর্ম বা বিশ্বাস নয় দরকার সচেতনতা।

পুনশ্চঃ আমি হয়ত খুব বেশি কিছু জানি না, তবে একটা সুগঠিত সিস্টেম থেকে ভালো কিছু আসে সেটা বুঝতাম। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেবার পর ছোট এই পরিবারটিকে আমি সুগঠিত একটা সিস্টেমে পরিনত করার চেষ্টা করেছিলাম। সময়, শ্রম আর অমুল্য ধ্যান ধারনা দিয়েছিলাম ওখানে। কিন্তু শেষবেলায় সেচ্ছাচারিতার কাছে ধাক্কা খেয়েছি। সত্যি বলতে কি, শেখার কোন শেষ নেই, সময়ও নেই। তাই স্বল্প সময়ে ভালো কিছু শেখাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে, হবে তা বাঞ্চনীয়।

——————————–
এইগানটা বেশ ভালো, গায়ক নয় তবে গায়কী স্টাইলটা আমার টাইপ (!):
এই গানটা যে আমাকে শেয়ার করেছে তাকে ধন্যবাদ। 🙂

This following one may be the original one. Also soothing.

FB তে মন্তব্য করতে এখানে লিখুন (ব্লগে করতে নিচে) :

24 Responses to মার্গারেট ও তার বাসার বিড়াল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

December 2024
S M T W T F S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031