বাইরে ঝড় হচ্ছে, বাতাসের অসম্ভব রকমের ঝাপটা, খুব ইচ্ছা করছে ছাদে যেতে। যেহেতু একটা পাহাড়ের উপরের ৫ তলা বিল্ডিং এ থাকি, এত উচুতে ঝড়টা কেমন দেখতে মন চাইছে। ব্যালকনি তে যাবার চেষ্টা করলাম কিন্তু দরজাটা খুলতেই পারলাম না…!! বাতাসের চাপে। ছাদে যাবার সাহসও হলো না, সেদিন দেখলাম যমুনা ব্রিজ থেকে ঝড় ট্রেনের বগি উড়িয়ে নিয়েছে…! মনে করতেই দমে গেলাম। কি জানি, নিউজটা না জানা থাকলে উপরে উঠে যেতাম।।
না জানা থাকলে অনেক কাজ সহজ হয়, বিশেষ করে দুঃসাহসিক কাজ গুলো।। হুম, অভিজ্ঞতার Downside ও আছে তাহলে…! :/
প্রিয় ডায়েরী,
তিন দিনের ছুটিতে কলিগেরা সবাই ডরম ছেড়েছে। একটা বেশ আনন্দময় সময় কাটাচ্ছি। একা একা।। একা সময়টা আমার বেশ কাটে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন ছুটি হতো সবাই চলে গেলেও আমি একা হবার আনন্দে থেকে যেতাম, যখন সবাই চলে আসত ঝটপট বাসা থেকে ঘুরে আসতাম। একা, এই একা থাকাটার মজাটা অন্যরকম। এই যেমন এখানে অনেকেরই থাকার কথা ছিল কিন্তু নেই। এই নেই টা একটা শুন্যতা সৃষ্টি করে যেটা উপভোগ্য। এটা ঠিক যেন হরতালে ঢাকার রাস্তা…হা হা হা!
পিসিতে Bonnie Chakraborty র একটা গান বাজছে, নীল স্লিপিং পিলের রাত। তুমি গুছিয়ে কোন কথা বলতে পারনা, এই লাইনটায় বেশ অভিমান ঝড়ে পড়ছে। হুহ্
একটা সফটওয়ারের কাজ শিখছি। গতকাল থেকে ওটার পিছে লেগেছি। কিন্তু ঝামেলা হচ্ছে এটা অনেক বেশি ইন্ট্রিগেটেড। বাগে আনতে সময় লাগবে বলে মনে হচ্ছে।
সময়, এই সময় করাটাই টাফ। গানের লিরিকসের সাথে তাল মিলিয়ে বলতে ইচ্ছা করছে, শুধু সময় কি নিজের গল্প বলে যাবে? দূর।
গতকাল হঠাৎ ই মাথা ব্যাথা করছিলো, মেডিক্যালে গিয়ে বিপিটা মেপে দেখলাম কিছুটা বেশি। হাইপারটেনশন…! এই রোগটা আব্বু-র ছিলো। আমার ছিলো না। তবে খুব শর্ট একটা পিরিওডের টেনশনে জিন থেকে এটা বেরিয়ে পড়েছে। ওই পিরিওডটা ছিলো টেনশনের, সত্যিকারের টেনশন। ওই সময়টার দিকে থাকালে খুব অভিমান হয়। টেনশন না করেও সমস্যাটার সমাধান করা সম্ভব ছিলো, অন্তত সময় তো সমাধান দিত, দিয়েছেও…! তাহলে…! এই যে সত্যিকারের টেনশন বললাম, এটা ছিলো ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। এখন অনেক পরিবর্তিত হয়েছি। এই পরিবর্তনটা বোধহয় দরকার ছিলো। প্রতিদান নয়, এতটুকু ইভালুয়েশনও যদি থাকতো…! Human life is interesting…!!
মেডিক্যালের ডাক্তারটা যখন দেখলো বিপি, জেরা শুরু করলো। হাসি মুখে উত্তর দিচ্ছিলাম তার প্রশ্নের। সে বললো, আপনারা পাহাড় পর্বত দিয়ে উঠা নামা করেন তাই বিপি একটু বাড়তেই পারে। আমি বললাম, তাই বুঝি? কিন্তু আমার তো হিস্ট্রি আছে…! সে বললো, তাহলে কিছু প্রিকশনস্ নিতে হবে, লবন খাওয়া যাবে না, এক্সারসাইজ করতে হবে…! আমি বললাম, এই যে পাহাড় পর্বতে সর্বদা উঠানামা করছি এটা কি এক্সারসাইজ না। সে একটু থতমত খেয়ে গেলো…! বললো- না, ফরমাল এক্সারসাইজ করতে হবে…! আমার প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করছিলো, এই পাহাড় পর্বতে উঠানামার কারনে যদি বিপি বাড়ে তাহলে এক্সারসাইজ করলে এটা কমবে, কেনো, কিভাবে?
:), করলাম না। ইয়াং ডাক্তার। বিপদে পড়ে যেতে পারে…! মেডিক্যালে যখনই গিয়েছি সন্মোধন পেয়েছি, স্যার। কিন্তু মেয়েটিকে দেখলাম সে ভাব বাচ্যে কথা বলছে। বাসা কোথায় জিজ্ঞাসা করতে জানালো এই তো এখানেই, কুমিল্লাতে। সে পালটা কোশ্চেন করলো, আপনার বাসা কোথায়? বললাম ফরিদপুর, সাথে সাথেই চোখটা দেখলাম চকচক করে উঠলো তার। সে ফরিদপুর মেডিক্যালের ছাত্রী ছিলো।। এবার দেখলাম তার আগ্রহ, সে বললো অনেকটা সময় তার ফরিদপুর কেটেছে। সে ঝিলটুলিতে ই থাকতো। আমাদের বাসা সে চিনে। সে যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেড়ে চলে যাচ্ছে বিসিএস পোস্টিং নিয়ে তাও গরগর করে জানালো। হা হা
প্রতিটি মানুষ এক একটা কোটর তৈরি করে তার মধ্যে বাস করে। এই কোটরে প্রবেশের জন্য দরজা থাকে, একাধিক। এর ভিতর অন্যতম একটা দরজার নাম, ভালোলাগা স্মৃতি। ফরিদপুরের নাম শোনার পর ডাক্তারটির চোখে সেই স্মৃতি দেখতে পেয়েছিলাম।
(1:45 am)