প্রিয় ডায়েরী,
এখন রাত বারটা বেজে বিশ মিনিট। ব্রিজবেনে আজ ঠান্ডা পড়েছে খুব। রাতে বোধহয় ৫-৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা নেমে যাবে। এই মাত্র একটা হট শাওয়ার দিয়ে আসলাম। এখন এসির ছেড়ে দিয়ে বসে আছি। এসি ঘরের ভিতর ২২ ডিগ্রী টেম্পেরেচার তৈরি করে রেখেছে। এখানের এসি গুলো ভালো। এগুলো এয়ার কন্ডিশনার, ঠান্ডা গরম দুই-ই সে পারে। বাসারটা ছিলো এয়ার কুলার, বাংলাদেশের বেশিভাগ গুলোই কুলার, শুধুই ঠান্ডা করে…!
মাঝে মাঝে এমন হয় না যে সব কিছু থেমে যায়। আমার উইকেন্ডগুলো এমন। উইকেন্ডে যদি কোথাও ঘুরতে না যাই আমার সময় কাটে না, সব কিছু থেমে যায়। এই সময় অনেক উলটপালট কাজ করি। এর ভিতরে একটা কাজ হচ্ছে স্মৃতি হাতড়ে অনেকদুরে চলে যাওয়া।
ছোট সময় আমি সাফার খুব ভক্ত ছিলাম। ইনফ্যাক্ট আমার খেলার সাথি সেই-ই ছিলো। তবে ও বড় ছিলো বেশ তাই আমার উপর খুব কন্টোল ছিলো ওর। ও বলতো আমি নাকি ওর লেজ…! সাথে সাথে থাকতাম বলেই ও এটা বলতো। তবে আমার মনে হয় আমি এতে মোটেও অপমানিত হতাম না। বরং ওর লেজ হিসাবে নিজেকে ভালোই লাগতো। হা হা হা
ছোট সময়ে ওর কাজ ছিলো আমার পড়া করে দেওয়া। বিষয়টা ছিলো এমন যে সে জোরে জোরে আমার পড়া পড়তো আর আমি তা শুনে পরীক্ষা দিতে যেতাম। খুব ভালো পরীক্ষা হতো না বোঝা যায়। তবে কেমনে কেমনে যেন ভালো রেজাল্টটা হয়েই যেতো। আজ হঠাৎ ই তেমনই একটা দিনের কথা মনে পড়লো। আর ঝলকে সেই ছোট বুবুকে দেখতে পেলাম। ঝুপড়ি চুল। 🙂
আমি পড়তাম আমার বাসার সামনের স্কুলে। সাফাও পড়তো সেখানে। নাম আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়। সে দিন ছিলো আমার ধর্ম পরীক্ষা। সেদিন বোধহয় সাফার সাথে খুটখাট লেগে ছিলো তাই পড়া হয় নি। তাতে কি, পরীক্ষা দিতে যথারীতি চলে এসেছি। আমার সিট পড়েছিলো জানালার পাশে। পরীক্ষার প্রশ্ন দেখে বুঝেছিলাম এ লেখা আমার কম্ম নয়। হঠাৎ ই দেখলাম বুবু, চুপটি করে আমার জানালার পাশে এসে দাড়িয়েছে। তার পর কি কি যেনো আমাকে বলে দিলো, আমি লিখলাম। হা হা হা …ছোট বেলাটা বেশ মজার ছিলো বলতে হবে, টিচাররা যেমন ছিলো ভয়াবহ, তেমনই করতো আদর। মনে আছে, টিচার দেখেছিলো কিন্তু তেমন কিছু বলেনি। অবশ্য ওই স্কুলের কমিটির সভাপতি ছিলো আমার আব্বা। তাই সব টিচাররাই আমাদের আদর করতো। তার পরেও, হা হা হা
চোখ বন্ধ করলে আমি এখন বুবুকে জানালার পাশে দেখতে পাই। ঝুপড়ি চুল, মুখের পাশে একটা কাটা দাগ। তার বিড়াল তাকে আচড় দিয়েছিলো। ……এই মুখটা কাল হঠাৎ ই এসেছে। ব্রেইনের কোন একটা সেলে সে ঘাপটি মেরে ছিলো। আবার ধীরে ধীরে হয়তো লুকিয়ে পড়বে।
সেদিনটা মনে রাখার আরো একটা বিশেষ কারন বোধহয় আছে। সে দিন বেনা বুড়ি মারা যায়। বেনা বুড়ি ছিলো একটা মহিলা, সে ভিক্ষা করতো আর স্কুলের পাশে একটা ছোট ঘর ছিলো সেটায় থাকতো। ওইখানে লক্ষন নামে একটা লন্ড্রি ওয়ালা থাকতো, পাজি টাইপের। তার কাজ ছিলো বেনা বুড়ি কে ক্ষ্যাপানো। সে ক্ষেপাতো আর বুড়ি রাগারাগি করতো। আর আমরা ছোটরা দূরে দাঁড়িয়ে তাকে দেখতাম। সে দিন বেনা -বুড়ি মারা গিয়েছিলো। শুনতে পেয়েছিলাম সে নাকি অনেক আগেই মারা গিয়েছিলো আর তার চোখদুটি ইদুরে খেয়ে ফেলেছিলো। এটা ভেবেই ছোট্র আমি ভয় পেয়েছিলাম। আমি মনে মনে ভাবছিলাম, চোখ নেই বেনা-বুড়ি দেখতে কেমন হবে?
এই প্রশ্ন সুপ্তভাবে এখনো আমার ভিতরে আছে, দেখতে কেমন হবে?
—ব্রিসবেন, ১৯,৯,০১ FidaAUS
CD-72