প্রিয় ডাইরি,
ঠিক এক বছর আগে, এই দিনে আমি নোয়াখালী ছিলাম। রাত ৮ টার দিকে হবে, নোয়াখালী সার্কিট হাউজের একটা সুইটে বসে, নামটা কি যেন ফুলের নাম ভুলে গেছি, ভাবছিলাম ৫ স্টার হোটেলেও তো আমি এমন আলিশান ব্যাবস্থা দেখিনি। এমন একটা দেশের Public Servant দের জন্য এই সুরম্য আলিশান ব্যাবস্থা ঠিক মানতে পারছিলাম না। ভয়াবহ নীতিনৈতিকতার অভাব আর করাপশনের নমুনা দেখতে পাচ্ছিলাম।
টিভিটা অনকরতেই ব্রেকিং নিউজ দেখতে পেলাম। কিছুক্ষনের জন্য থমকে গেলাম। আমার সাথে ছিল ববি ভাইয়া, দেখলাম সেও হতবাক। কারন সারাটা দিনই আমরা হুমায়ুন স্যারকে নিয়ে বিভিন্ন কথা বলছিলাম। হঠাৎ করেই বুকের ভিতর শুন্যতা অনুভব করতে শুরু করলাম। ওহ্,
বিশ্বাস করতে সত্যি কষ্ট হচ্ছিল, কেননা আমরা ধরেই নিয়েছিলাম হুমায়ুন স্যার কর্কট রোগ কে জয় করে আমাদের মাঝে থেকে যাবেন। হায়
সেদিনের সেই হুমায়ুন হারানোর ব্যাথা আজো অনুভব করতে পারি। হঠাৎ করেই সেই শুন্যতাকে অনুভব করতে পারি আজো, যা পুরন হয় নি, হবে ও না হয়ত।
এখনো মনে পড়ে, বার বার মনে হচ্ছিলো আর হিমুর সৃষ্টি হবে না, হবে না মিসির আলীর রহস্য ভেদ। চোখের কোনে হয়ত একফোটা অশ্রু এসেছিলো যা শুকিয়েও গিয়েছিলো হারানোর ব্যাথায়।
ভেবেছিলাম স্যারকে নিয়ে কিছু একটা করা। সকালেই ডিপার্টমেন্টের দুইজন উদ্দেগী স্টুডেন্ট কে জানালাম আমার প্লান। স্যারকে স্বরন করে একটা দেয়ালিকা করব। আমি জানি আমার স্টুডেন্টদের। তাদের শুধু একটু রাস্তা করে দিতে পারলেই হলো। ব্যাস। কাজ শুরু হয়ে গেলো। তবে কাজ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ এখনো অনুকুল নয়। কেননা যন্ত্রপাতির জোগার সাহসাই করা সম্ভব হয় না। কিছু কিছু জিনিস ইভেন ঢাকা থেকেও আনতে হলো। ধীরে ধীরে কাজ চললো। কারন পরিবেশ, পর্যাপ্ত জায়গার অভাব আর অভাব সময়ের। আমি জানি প্রথম কাজ তো তাই অনেক কিছুই আস্তে আস্তে হবে স্বাভাবিক। তবে একবার শিখে গেলে পরবর্তিতে দ্রুত করতে পারবে ওরা।
আমার মনে পড়ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা, কত্ত অনুষ্টান করেছি আমরা। সেমিনার, কর্মশালা। সবচেয়ে বেশি এরেঞ্জড হতো ফ্রেশার্শ রিসিপশন প্রগ্রাম। অনুষ্টানের আগের দিন আমরা আমাদের অডিটরিয়াম সারা রাত জেগে ডেকোরেশন করতাম। অদ্ভুদ এক গ্যাদারিং ছিলো। এখনো চোখের সামনে দেখতে পাই। আমাদের ডিপার্টমেন্টের প্রগ্রামেও আমরা ব্যান্ড আনতাম। বেশ এক্সাইটিং ছিল।
কুমিল্লায় পরিবেশ গড়ে উঠেনি। একটা দেওয়ালিকা করতে গিয়েই আমি হাপিয়ে উঠেছি। দেওয়ালিকাটি করতে গিয়ে অনাকাঙ্খিত ঘটনার মুখোমুখি হয়ে একেবারেই ডীমোটিভেটেড হয়ে গেছি। তাই আজো সেই দেওয়ালিকা দেওয়ালে ঝুলতে পারেনি।
পরিবেশের অভাবে ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে স্যার আপনাকে ছড়িয়ে দিতে পারিনি এই শিক্ষার্থীদের মাঝে। আক্ষেপ,~~~ উহু আক্ষেপ করব না। কেনো করব? করব না। কারন আমি জানি, আজ আমি পারিনি, তবে এই ছাত্রছাত্রীরাই একদিন এই পরিবেশকে পরিবর্তন করবে। করতে যে হবেই। কারন, এটা তো জীবন। নিশ্চয়ই জীবনের ব্যাপারে কেউ আপস করবে না। একদিন সবই হবে, তখন কেউ কেউ হয়ত সেই দেয়ালিকাটির কথা মনে করবে, মনে করবে হুমায়ুন স্যারকে। 🙂
হুমায়ুন স্যার, তোমার জন্য আমার রইলো ভালোবাসা। আমি জানি, এই ভালোবাসা তোমার কাছে পৌছবেই।
(রাত ১:৩০)
আমার একটা প্রিয় গানঃ
Shironamhin – Eka (music.com.bd)
Powered by mp3skull.com
Leave a Reply