Independent Learning is the Norm of University Education.

স্বাধীনভাবে শেখাই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার আদর্শ

স্বাধীন শব্দটার যদিও অর্থ ভেদ আছে। তবুও আমি বিশ্বাস করি, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার ধরনটা সব সময় ইন্ডিপেন্ডেন্ট হওয়া উচিত। উচিত এই অর্থে যেন একজন স্টুডেন্ট স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারে, নিজের থেকেই নিজের সিদ্ধান্তগুলো নিতে পারে। বস্তুত ১৮ বছর অতিক্রম করে ফেলা ছাত্রছাত্রীদেরই চর্চাক্ষেত্র বিশ্ববিদ্যালয়, যেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের আগের লেভেলগুলোতে (স্কুল/কলেজ) ফলত অনুপস্থিত, তাই নিঃসন্দেহে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার তারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চর্চা করবে আর ধীরে ধীরে স্বাধীন স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে, এটাই কাম্য।

বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালীন কোন এক রোজার ছুটিতে আমি বাসায় না এসে হলে অবস্থান করছিলাম। কারন রোজার পর পর ই আমার ইয়ার ফাইনাল ছিল। সম্ভবত ২য় বর্ষের ছাত্র ছিলাম তখন আমি। হলে একা একা রুমে থাকি, আসে পাশের রুম গুলোতে ও প্রায় কেউই থাকে না। তখন হলে নতুনও উঠেছি। আমি যে হলটায় থাকতাম তার নাম সাদ্দাম হোসেন হল, সংক্ষেপে এস.এইচ.হল। এই হলটা ইরাকের প্রয়াত রাস্ট্রপতি সাদ্দাম হোসেনের অর্থায়নে করা হয়েছিল।
সে যাই হোক, হলে একেবারে নতুন তারপর একা একা। বেশ অদ্ভুদ লাগছিলো আমার। ডাইনিং এ খেতে যাই, ডাইনিং এর বয় গুলো অদ্ভুদ চোখে যেন তাকিয়ে থাকে আমার দিকে! আগুন্তক…! তখন আদনান সামির একটা নতুন এলবাম বাজারে এসেছিলো। তার একটা গান, কি যেন, “তেরা চেহারা কাভি নজর আগে”…, এইটা আমার ফ্লোরে ওই দুরের রুমে বাজতো। ওই ছেলেটা যখন আমার রুমের সামনে দিয়ে যেত, উচু গলায় গানটা গাইতো আর মাঝে মাঝে রুমে উকি দিতো  😆 । কি করি আমি,ভাবত হয়তো। ❓

গানটা খুজে পেয়েছি 😎

 

সেহেরীতে উঠে আর ঘুমাতাম না, পড়ার টেবিলে বসে থাকতাম, বাইরে তাকিয়ে থাকতাম, সুর্যদোয় দেখতাম, দেখতাম কিভাবে ধীরে ধীরে চারপাশটা থেকে অন্ধকার হারিয়ে যাচ্ছে, আলোয় চারপাশটা উদ্ভাসিত হচ্ছে। কখনো কখনো ডাইরি লিখতাম আবার এরই মাঝে একাডেমিক বিষয় নিয়ে পড়তাম। পড়তে পড়তে একদিন একটা জিনিস আবিস্কার করলাম। 💡

 

আমাদের ডিপার্টমেন্ট Mentionable রাশভারী একজন শিক্ষক ছিলেন, নাম আব্দুস সোবাহান। ড. সোবাহান স্যার ছিলেন অসম্ভবরকমের নীতিবান একজন লোক। তিনি কখনোই বকা দিতেন না, তবুও সবাই স্যারকে কিছুটা ভয় পেতো। আমার ছিলো স্যারের প্রতি অনেক কৌতুহল। স্যার কঠিন কঠিন কোর্স গুলো নিতেন, আর পড়ানোর মাঝে শুদ্ধ ভাষায় বলতেন, – না বুঝলে বলিও। কিন্তু সবাই মুখে কুলুপ এটে থাকত। আমি মাঝে মাঝে প্রশ্ন করতাম, স্যার উত্তর দিতেন। কিন্তু একাই শুধু প্রশ্ন করি দেখে মাঝে মাঝে প্রশ্ন করা থেকে নিবৃত থাকতাম। তাছাড়া স্যারের উত্তর আসবার পর, আমার প্রশ্নগুলোর সাধারনমান ফুটে উঠত 🙁  যেটা ছিলো পীড়াদায়ক। 🙄

 

একদিন, সেহেরী শেষে পড়ছি। যে বিষয়টা পড়ছিলাম সেটা সোবাহান স্যার নিতেন। সম্ভবত ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্স এর কোন একটা টপিক ছিল। পড়ছি আর দেখছি বই-এর উপর ড সোবাহান স্যারের রাগীরাগী (!) চেহারাটা ভেসে উঠেছে। খুবই কঠিন একটা টপিক পড়ছিলাম, টপিকটা আরো ভয়াবহ হয়ে গেলো। 😡 এর ভিতর ঘটনাটি ঘটে গেলো, আমি হঠাৎ করেই বুঝতে পারলাম টপিকটা যতটা ভয়াবহ ভেবেছি বিষয়টা আসলে তা নয়, বরং বিষয়টা অনেকটা উলটো মানে বেশ সহজ, শুধু কিছুটা লেন্‌দি এই যা। শুরু করলাম বিষয়টাকে নতুন করে উদ্ঘাটন করা। একটা সময় অবাক হয়ে লক্ষ করলাম বিষয়টা এখন আমার কাছে অনেকটা পানির মতই পরিস্কার আর একই সাথে উদ্ঘাটন করলাম স্যার এটাকে বেশ কঠিনভাবেই বুঝিয়েছে তাই-ই কঠিন। প্রথমে হাসি পেলো পরে আনন্দিত হলাম কারন এই বিষয়টির উসিলায় হলেও স্যারের সাথে কথা বলা যাবে ভেবে।

এই দিনটা আমার শিক্ষা জীবনের একটা অন্যরকম দিন। মুলত, সিলেবাসের বাইরে পড়ার সময়, সুযোগ কিংবা প্রয়োজন তখন (২য় বর্ষ) আমাদের ছিল না। অনেকটা গাইডেড পড়াশুনা নিয়েই থাকতাম। তবে ওই দিনের পর থেকে আমার নিজের পড়াশুনার Horizon টা বিস্তৃতি পেলো। মোটা মোটা বই নিজে নিজে পড়ে তার মর্ম উদ্ধারের কনফিডেন্সটা পেলাম।

 

মনে পড়ে সেই দিন গুলোর কথা। দিনগুলোকে “অন্যরকম” বলতে ভালো লাগে।
(Continued)

 

 

স্টিং-এর এই গানটা কিন্তু বেশ সুন্দর; You may listen 🙂

 

পুনশ্চঃ কোন এক অজ্ঞাত কারনে ড সোবাহান স্যার আমাকে পছন্দ করতেন। আমি বুঝতে পারতাম। রহস্যটা উদ্ঘাটন করার খুব ইচ্ছা ছিলো। কিন্তু মানুষের সব ইচ্ছা পুরন হওয়া সম্ভব নয়, উচিত ও নয়। (SIGH)

FB তে মন্তব্য করতে এখানে লিখুন (ব্লগে করতে নিচে) :

4 Responses to বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও একটি স্মৃতিকথা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

April 2024
S M T W T F S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930